পানির অপর নাম জীবন হলেও বর্তমানে পানির স্বপ্লতার কারণে জীবন যাপন ব্যাহত হচ্ছে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী গ্রামের মানুষের। দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামের নলকুপে পানি না উঠায় বিশুদ্ধ পানির জন্য দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজের ব্যাহত হচ্ছে বলে জানায় স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের মতে, ২৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র শুরু থেকে সচল রাখতে কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী ইউসুফপুর ও দুধিপুকুর গ্রামে ১৪টি গভীর পাম্প স্থাপন করা হয়।
২০০৬ সাল থেকে গভীর নলকুপ গুলো থেকে অনবরত পানি উত্তোলনের ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এসব এলাকার নলকূপ দিয়েএখন আর পানি উঠছে না। ফলে বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার পড়েছে উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের শেরপুর, উত্তর শেরপুর ও মধ্যমপাড়া গ্রাম এবং ফুলবাড়ীর শিবনগর ইউনিয়নের রামভদ্রপুর, মধ্যরামভদ্রপুর, মধ্যদুর্গাপুর ইউসুবপুরের ২টি ও দুধিপুুকুরের ৩টি গ্রামে।
জানা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে পানির সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করলে এলাকাবাসী বিশুদ্ধ পানির দাবীতে আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে তাপবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (আরডিএ) বগুড়ার সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামগুলোতে গভীর নলকূপ বসিয়ে পাইপ লাইনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ শুরু করে।
ইউসুবপুর গ্রামের ইয়াছিন আলীর স্ত্রী মুক্তা ইয়াছমিন (২৮) জানান, আগে কখনও এমন ছিল না। গত প্রায় ৭-৮ বছর ধরে তাদের এ সমস্যার মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এখন জনপ্রতি পানির জন্য প্রতি মাসে ১২ টাকা হারে পানির বিল দিতে হয়। তারপরও চাহিদামত পানি পাওয়া যায় না। তিনি অভিযোগ করেন, বাড়ীর পাশে বিদ্যুৎ কেন্দ্র, তা সত্বেও এলাকায় তীব্র বিদ্যুৎ লোডশেডিং। আর এ কারনে দিনের প্রায় অর্ধেক সময় পানি সরবরাহ বন্ধ থাকে।
এছাড়াও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্য হিসেবে ড্রেনের মাধ্যমে চলে আসা ময়লাযুক্ত- দূষিত পানি পার্শ্ববর্তী কৃষি জমিসহ তিলাই নদীতে এসে পড়ে। আর এসব পানি শরীরের সংস্পর্শে আসা মাত্র দেখা দেয় চুলকানিসহ বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ।
এব্যাপওে পার্বতীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নবিউর রহমনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রর পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে দূষিত পানির কারণে চর্মরোগ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি তিনি অবগত রয়েছেন। তবে মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চর্মরোগ প্রতিরোধে তৎপর রয়েছেন।
বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী (আইএন্ডসি) মাহবুবুর রহমান জানান, ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামগুলোতে তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের অর্থায়নে বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে কয়লা ধোয়া যে পানি বের হয়, তাতে পরিবেশগত কোন সমস্যা সৃষ্টির সম্ভবনা নেই। বরং এই পানি যে জমিতে পড়ে তার ফসল উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। তিনি জানান, এলাকায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ফলে স্থানীয় অনেক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারনে সমাধানযোগ্য কিছু সংকট তৈরী হলেও এখানকার উৎপাদিত বিদ্যুৎ সারাদেশের চাহিদার অনেকটাই পূরণ করছে।